আপনারা অনেকেই আজকে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম তা জানেন না। আবার অনেকেই তা জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ সর্ম্পকিত তথ্য খুঁজে থাকেন। আজকে তাই আজ কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম এ সর্ম্পকিত বিষয়গুলো আপনারা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আপনারা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। নিচে এ সর্ম্পকে বিস্তারিত ধারনা আলোচনা করা করা হলো।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!তালাক কি?
তালাক হচ্ছে স্বামী স্ত্রী একে অপর থেকে আইনি ভাবে বিচ্ছেদের একটি প্রক্রিয়া। আরবী শব্দ তালাকের অর্থ বিচ্ছিন্ন করা, ত্যাগ করা, আলদা করা ইত্যাদি। যার ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো Divorce। ইসলাম ধর্মে তালাক বলা হয় বিবাহ বন্ধনের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদকে। কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম ? বিবাহ হল সকল সুখের মূল। এই পৃথিবীতে বৈধ কোন সম্পর্ক যদি থেকে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে বিবাহ। কিন্তু সেই বিবাহ যদি সুখের বদলে দুঃখ বয়ে আনে তখন তালাক ঘটে।
কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম
পারিবারিক জীবনে অথবা দাম্পত্য জীবনে কেউ যদি অসুখী হয়ে থাকেন এবং সেখানে যদি সংসার করা সম্ভব না হয় তাহলে তখন তালাকের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয় যে কেউ চাইলেই কোর্টের মাধ্যমে তালাক দিতে পারবে। তবে কিছু নিয়ম-কানুন আছে যেগুলো আপনাকে মেনে কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হয়না।
কিন্তু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় তাহলে যেকোনো পদ্ধতির মাধ্যমে সর্বপ্রথমে তাকে তালাক ঘোষণা করতে হবে। কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম ? তবে নিকাহনামার ১৮ নম্বর দফায় বা কলামে স্ত্রীকে তালাক বা ডিভোর্স দেওয়ার অধিকার না দিলে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য স্ত্রীকে আদালতে আবেদন করতে হয়। ১৯৩৯ সনের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের আইন অনুযায়ী স্ত্রী তার স্বামীকে Divorce দিতে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে।
আইনি ভাবে তালাক দেওয়ার জন্য আদালত থেকে তাদের একটি নোটিশ পাঠানো হয় যা তাদের পুর্ন্মিলন বা সমঝোতার জন্য একসাথে থাকার জন্য বলা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত যাচাই বাছাই করে আদেশ জারী করবেন। আদালতের আদেশের ৭(সাত) দিনের মধ্যে আদেশের সত্যায়িত কপি আদালত তার নিজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান বা মেয়রের ঠিকানায় পাঠাবেন। চেয়ারম্যান বা মেয়র যেদিন নোটিশ পাবেন, সেদিন থেকে ঠিক ৯০ দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।
কি কি কারণে স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন
- চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে।
- দুই বছর স্বামী স্ত্রীর খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হলে।
- স্বামীর সাত বছর কিংবা তার চেয়ে বেশী কারাদণ্ড হলে।
- স্বামী কোন যুক্তি সংগত কারণ ব্যতীত তিন বছর যাবৎ দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
- বিয়ের সময় পুরষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায় করা পর্যন্ত বজায় থাকলে।
- স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যধিতে বা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে।
- বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা বা অভিবাবক যদি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক(সহবাস) স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনি কোন বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
- স্বামী ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লংঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।
- স্বামী নিষ্ঠুর ব্যবহার করলে।
স্বামীর আদালত স্বীকৃত নিষ্ঠুর ব্যবহার সমূহ
- অভ্যাসগতভাবে স্ত্রীকে আঘাত করলে বা নিষ্ঠুর আচরণ করলে, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায় না পড়লেও তার জীবন শোচনীয় করে তুলছে এমন হলে।
- স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবন যাপন করলে।
- স্ত্রীকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করলে।
- স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে।
- স্ত্রীকে ধর্ম পালনে বাধা দিলে।
- একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে।
- এছাড়া অন্য যেকোন কারণে( যে সকল কারণে মুসলিম আইনে বিয়ের চুক্তি ভঙ্গ হয়) ।
আরও পড়ুনঃ মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম 2023
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা আজ কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম জেনেছেন। এছাড়াও যদি এ সর্ম্পকে কোনোরকম প্রশ্ন আপনাদের মনে থেকে যায় তাহলে আপনারা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে তা আমাদের জানাবেন। আমরা চেষ্টা করব এ সর্ম্পকে আপনাদের আরও তথ্য জানাতে।